• বুধবার, ২২ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:০২ পূর্বাহ্ন

রসিকতায়ও মিথ্যা নয় 

নিউজ ডেস্ক
আপডেট : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

হাস্য রসিকতা মানবজীবনের একটি সুখকর উপাদান। এ ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করা যেমন ক্ষতিকর, তেমনি একদম রসিকতাহীন জীবন যাপন করা বেমানান।

একজন মহান ও পূত পবিত্র ব্যক্তিত্বের পক্ষ থেকে ছোটদের সঙ্গে হাসি রসের আচরণ, তাদের মনোরঞ্জন ও সম্মান বৃদ্ধির কারণ হয়। যা অন্যকোনো পন্থায় অর্জিত হয় না।  

তাই হজরত রাসূলে কারিম (সা.) হাসি-কৌতুক করতেন। সাহাবাদের সঙ্গে মাঝে-মধ্যে হাসি-খুশি করতেন। এটাই হচ্ছে বড়দের পক্ষ হতে ছোটদের প্রতি সুখপ্রদ সোহাগ।  
তবে রসিকতা হতে হবে নির্দোষ পরিচ্ছন্ন এবং প্রজ্ঞাপূর্ণ। যে হাসি-মজা বা আমোদ-প্রমোদে মিথ্যা বা ধোঁকার সংমিশ্রণ থাকে এবং যে রসিকতা কারো মনোবেদনা বা মানহানির কারণ হয়- তা নাজায়েয ও নিষিদ্ধ।  

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) এদিকে ইঙ্গিত করেই বলেছেন ‘তোমার ভাইয়ের সঙ্গে ঝগড়া করো না এবং ঠাট্টা-বিদ্রুপ করো না। অর্থাৎ যে হাসি রসিকতা অন্তরে কঠোরতা সৃষ্টি করে অথবা আল্লাহর ধ্যান থেকে মানুষকে গাফেল করে বা কারো কষ্টের কারণ হয় কিংবা কারো গাম্ভীর্য ও মর্যাদা নষ্ট করে এ ধরনের হাসি-তামাশা নিষেধ। পক্ষান্তরে যে হাস্যরস মনে প্রফুল্লতা আনে এবং যে রসিকতা ইবাদত-বন্দেগি ও দ্বীনী কাজে দেহ-মনকে সজিব করা এবং দৈহিক ও মানসিক অবসাদ ও ক্লান্তি দূর করার উদ্দেশ্যে হয়ে থাকে এবং তা নির্দোষ হয় তা শুধু জায়েযই নয় বরং মুস্তাহাব।  

সাহাবি হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, ‘নবী করিম (সা.) কখনো কখনো তাকে (কৌতুক করে) ‘দুই কানওয়ালা’ বলে ডাকতেন। ’ -শামায়েলে তিরমিজি: ২৩৬ 

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হজরত আনাস (রা.) কে দুই কানওয়ালা বলে সম্বোধন করেছেন এতে কোনো মিথ্যা বা ভুল ছিল না। বিশেষ কোনো কারণে হজরত আনাস (রা.) কে দুই কানওয়ালা বলেছেন। যেমন তার দুই কান তুলনামূলক বড় ছিল বা তার শ্রবণশক্তি প্রবল ছিল। তিনি দূরের কথাও অনায়াসে শুনতে পেতেন।  

তেমনিভাবে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ছোট শিশুদের সঙ্গেও হাসি-মজা করতেন। তাদের আনন্দ দিতেন। হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন হজরত রাসূলে কারিম (সা.) আমাদের সঙ্গে অবাধে মিশতেন। এমনকি তিনি আমার ছোট ভাইকে কৌতুক করে বলতেন- ‘আবু উমায়ের কি করে নুগাইর। ’ অর্থাৎ তোমার নুগাইর পাখিটার কি অবস্থা? আবু উমায়ের এর খেলার পাখিটা মারা গেলে সে অনেক কষ্ট পায়। তাই তার মনোরঞ্জনের জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য পাখিটির অবস্থার কথা জিজ্ঞেস করেন। এভাবে হজরত রাসূলে কারিম (সা.) তার সঙ্গে কথা বলার দ্বারা তার দুঃখ দূর হয়, সে আনন্দিত হয়।  

আমরা অনেক সময় শিশুদের সঙ্গে রসিকতা করতে যেয়ে তাকে কাছে ডাকার জন্য খালি হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বলি- ‘এসো তোমাকে দেবো। ’ এটা মিথ্যা, যা ধোঁকার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইসলামে নিষিদ্ধ। এতে প্রথমত ধোঁকার গোনাহ হয়। দ্বিতীয়ত এই শিশুটি এখানে একটা অনৈতিক শিক্ষা পায় এবং তার হৃদয়ে বিষয়টি বদ্ধমূল হয়ে যায়। বড় হলে তার কাছে এটাকে আর অন্যায় বা অনৈতিক মনে হবে না।  

অতএব যার সঙ্গে হোক না কেন হাসি-মজা বা রসিকতা হতে হবে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ধোঁকা মুক্ত। হতে হবে নির্দোষ ও সত্য।  

হজরত আবু হুরায়রা (রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন একবার কিছু সাহাবি আরজ করেন ইয়া রাসূলুল্লাহ! আপনি আমাদের সঙ্গে কৌতুকও করেন? হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, আমি কেবল সত্য কথাই বলে থাকি। (এমনকি কৌতুকেও) –শামায়েলে তিরিমিজি: ২৩৮ 

অন্য এক হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলে কারিম (সা.)-এর নিকট এক বৃদ্ধা এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আল্লাহর নিকট দোয়া করুন যেন তিনি আমাকে জান্নাত দান করেন। তখন রাসূল (সা.) (রসিকতা করে) বলেন, হে অমুকের মা! জান্নাতে কোনো বৃদ্ধা প্রবেশ করবে না। পরে বৃদ্ধা মহিলাটি কাঁদতে কাঁদতে ফিরে যাচ্ছিল। তখন রাসূল (সা.) সাহাবাদের বললেন, তাকে গিয়ে বলো- সে বৃদ্ধা হয়ে যাবে না; বরং সে যুবতী ও চির কুমারী হয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। -শামায়েলে তিরমিজি: ২৪১ 

এখানেও হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো মিথ্যা বা অসত্য বলেননি। এভাবে বিভিন্ন সময় রাসূল (সা.) সাহাবায়ে কেরামদের সঙ্গে হাসি-তামাশা করতেন। তবে রসিকতার মধ্যে কখনও মিথ্যা বা ধোঁকার আশ্রয় নিতেন না। সর্বদা সত্য ও বাস্তব বিষয়াদিতে রসিকতা করতেন।


এই বিভাগের সব খবর
October 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
282930