• রবিবার, ০১ জুন ২০২৫, ০৫:২১ অপরাহ্ন

যেভাবে কথা বলতেন প্রিয় রাসুল (সা.)

নিউজ ডেস্ক
আপডেট : সোমবার, ২৬ আগস্ট, ২০২৪

কথাবার্তা দিয়ে একজন মানুষের ভালো-মন্দ যাচাই করা যায়। এরই মধ্যে ফুটে ওঠে তার ব্যক্তিত্ব ও স্বভাব।

এই কথা মানুষকে যেমন জান্নাতে পৌঁছাতে সাহায্য করে, অনুরূপ জাহান্নামের পথেও নিয়ে যায়। একজন মুমিনের কথাবার্তা কেমন হবে, কেমন হবে তার সম্বোধন—তার উত্তম দৃষ্টান্ত রয়েছে রাসুল (সা.)-এর জীবনে। নিম্নে মহানবী (সা.)-এর কথাবার্তা ও বাকভঙ্গির নানা দিক তুলে ধরা হলো—
সত্যবাদিতা  কথার সত্যতা হলো কথার সঙ্গে বাস্তবতার মিল থাকা। সত্যের একটা প্রভাব আছে, যা মানুষকে আকর্ষণ করে। কোরআনে সত্য কথার প্রতি গুরুত্ব দিয়ে বর্ণিত হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সঙ্গে থাকো। ’ (সুরা  তাওবা, আয়াত  ১১৯)

রাসুল (সা.) নবুয়তের  আগে ও পরে সত্যবাদী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। সত্যবাদী হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল শৈশব থেকে। রাসুল (সা.) সাহাবিদের সত্য বলতে উৎসাহিত করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই সত্য ভালো কাজের পথ দেখায় আর ভালো কাজ জান্নাতের পথ দেখায়। আর মানুষ সত্য কথা বলতে অভ্যস্ত হলে আল্লাহর কাছে সত্যবাদী হিসেবে (তার নাম) লিপিবদ্ধ হয়। নিশ্চয়ই অসত্য পাপের পথ দেখায় আর পাপ জাহান্নামের পথ দেখায়। কোনো ব্যক্তি মিথ্যায় রত থাকলে পরিশেষে আল্লাহর কাছে মিথ্যাবাদী হিসেবেই (তার নাম) লিপিবদ্ধ করা হয়। (বুখারি, হাদিস  ৬০৯৩)

স্পষ্টতা  স্পষ্টতা কথার অন্যতম গুণ। শ্রোতার মনে স্পষ্ট কথার প্রভাব বেশি পড়ে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর কথা এত সুস্পষ্ট ছিল যে প্রত্যেক শ্রোতা তাঁর কথা বুঝত। ’ (আবু দাউদ, হাদিস  ৪৮৩৯)

ধীরস্থিরতা  ধীরস্থিরতা কথার অন্যতম গুণ। দ্রুত গতিতে কথা বলা, যা মানুষের বুঝতে কষ্ট হয় দূষণীয়। রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ধীরস্থির ছিলেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) এমনভাবে কথা বলতেন যদি কোনো গণনাকারীর গণনা করতে ইচ্ছা করে তবে সে গুনতে পারবে। ’ (মুসলিম, হাদিস  ৭৩৯৯)

মিষ্টভাষী  রাসুল (সা.) কথাবার্তায় ও আচার-আচরণে কোমলতা অবলম্বন করতেন। কর্কশ ও রূঢ় ভাষায় কারো সঙ্গে কথা বলতেন না এবং কাউকে সম্বোধনও করতেন না। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আপনি যদি কঠোর হৃদয়ের হতেন, তবে মানুষ আপনার থেকে দূরে চলে যেত। ’
(সুরা  আলে ইমরান, আয়াত  ১৫৯)

বাহুল্য বর্জন  রাসুল (সা.) কখনো প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতেন না। সওয়াবহীন কাজে কখনো সময় ব্যয় করতেন না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, কোনো ব্যক্তির ইসলাম পালনের অন্যতম সৌন্দর্য হলো অনর্থক কথা ও কাজ ত্যাগ করা। ’ (তিরমিজি, হাদিস  ২৩১৮)

শালীনতা  রাসুল (সা.)-এর কথাবার্তা শালীনতার চাদরে আবৃত ছিল। তিনি কখনো অশালীন কথা বলেননি। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুল (সা.) অশালীন, অভিশাপকারী ও গালিদাতা ছিলেন না। তিনি কাউকে তিরস্কার করার সময় শুধু এটুকু বলতেন—কী হলো তার তার কপাল ধূলিমলিন হোক। ’ (বুখারি, হাদিস  ৬০৬৪)

বিশুদ্ধভাষী  রাসুল (সা.) ছিলেন সবচেয়ে বিশুদ্ধ ভাষার অধিকারী। তাঁর উচ্চারণ, শব্দ প্রয়োগ ও বাচনভঙ্গি সবই ছিল বিশুদ্ধতার মাপকাঠিতে উত্তীর্ণ। হিন্দ ইবনে আবু হালা (রা.)-কে রাসুল (সা.)-এর বাচনভঙ্গি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, রাসুল (সা.) তিনি বেশির ভাগ সময় নীরব থাকতেন। বিনা প্রয়োজনে কথা বলতেন না। তিনি স্পষ্টভাবে কথা বলতেন।
তিনি ব্যাপক অর্থবোধক বাক্যালাপ করতেন। তাঁর কথা ছিল একটি থেকে অপরটি পৃথক। তাঁর কথাবার্তা অতি বিস্তারিত কিংবা অতি সংক্ষিপ্তও ছিল না। অর্থাৎ তাঁর কথার মর্মার্থ অনুধাবনে কোনো প্রকার অসুবিধা হতো না। তাঁর কথায় কঠোরতার ছাপ ছিল না, থাকত না তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের ভাব। ’ (শামায়েলে তিরমিজি, হাদিস  ১৬৭) 


এই বিভাগের সব খবর
June 2025
M T W T F S S
 12
3456789
10111213141516
17181920212223
24252627282930
31